পৃথক পৃথক অভিযান পরিচালনা করে যশোর জেলার কোতয়ালী থানাধীন এলাকা এবং রাজধানীর মিরপুর এলাকা হতে বৃহৎ এবং সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল/গাড়ী চোরচক্রের অন্যতম মূলহোতা সৈয়দ মাহামুদ হাসান (৩৭) এবং তার প্রধান দুই সহযোগী মিরাজ হোসেন (৩২) ও মোঃ আল আমিন (৪৩)’কে ০১ টি চোরাই মোটরসাইকেল এবং ০১ টি চোরাই মাইক্রোবাসসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তৎপরতা এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে যে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা হতে চোরাই ও ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেল ও গাড়ীসমূহ একটি বৃহৎ সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে গাড়ির রং, ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর ও রেজিষ্ট্রেশন নম্বর পরিবর্তন এবং ভ‚য়া কাগজপত্র তৈরী করতঃ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্রয়-বিক্রয় করে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল ০৫/০৫/২০২৩ তারিখ রাতে যশোর জেলার কোতয়ালী থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত সংঘবদ্ধ চক্রটির অন্যতম মূলহোতা ১। সৈয়দ মাহামুদ হাসান (৩৭), পিতা-সৈয়দ আকবর আলী, সাং-ধর্মতলা, থানা-অভয়নগর, জেলা-যশোর এবং রাজধানীর মিরপুর এলাকা হতে তার সহযোগী ২। মিরাজ হোসেন (৩২), পিতা-সিদ্দিক মোল্লা, সাং-ধলহরা, থানা-মাগুরা সদর, জেলা-মাগুরা ও ৩। মোঃ আল আমিন (৪৩), পিতা-মৃত শাহিদ বিশ্বাস, সাং-ধলহরা, থানা-মাগুরা সদর, জেলা-মাগুরা’কে ০১ টি চোরাই মাইক্রোবাস এবং ০১ টি চোরাই মোটরসাইকেলসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গত ২৯/০৪/২০২৩ তারিখ রাজধানীর সবুজবাগ থানাধীন এলাকার বাসিন্দা জনৈক ওমর ফারুক এর বাসা হতে গভীর রাতে চোরচক্রের সদস্যরা বাসাটির গ্যারেজে রাখা ০২ টি ‘‘এ্যাপাচি-ফোর ভি’’ মোটরসাইকেল তালা ভেঙে চুরি করে নিয়ে যায়। পরদিন ভোরবেলা মোটরসাইকেল দুটির মালিকরা তাদের মোটরসাইকেলগুলো খুজে না পেয়ে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোজাখুজির পর সবুজবাগ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। বিষয়টি র্যাবের নজরদারিতে আসলে সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ এবং গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি বৃহৎ সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোরচক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। যার প্রেক্ষিতে চুরির সময় ধারনকৃত সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চুরিতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী ইউনুস(৪০)’কে গত ০৩/০৫/২০২৩ তারিখ গ্রেফতার করে সবুজবাগ থানায় সোপর্দ করেছে র্যাব-৩। বর্তমানে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের স্বার্থে তাকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও গতরাতে চক্রের অন্যতম মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। ধৃত মাহামুদ উক্ত চক্রেরই একজন অন্যতম মূলহোতা।
ধৃত আসামিদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, উক্ত চক্রটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। প্রথমত মাহামুদের নেতৃত্বে একদল মাঠপর্যায়ে মোটরসাইকেল/গাড়ী চুরির উদ্দেশ্যে টার্গেট করে। উক্ত টার্গেটকে সামনে রেখে রেকির মাধ্যমে মোটরসাইকেল রাখার স্থান বা বাসা চিহ্নিত করে। পরবর্তীতে সময়-সুযোগ বুঝে তারা মোটরসাইকেলের তালা ভাঙা ও কাটার মতো কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে রাতের আধারে টার্গেটকৃত বাসায় ঢুকে মোটরসাইকেলটি চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে কৌশলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে চুরিকৃত মোটরসাইকেল নিয়ে তারা রাজধানী ছেড়ে দেশের কোন দূরবর্তী জেলায় চলে যায়। সেখানে উক্ত চোরচক্রের অপরাপর সদস্যদের কাছে মোটরসাইকেল হস্তান্তর করার পর তারা অতি দ্রæততার সাথে তাদের নিজস্ব ওয়ার্কশপে নিয়ে মোটরসাইকেলের রং, ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর, নম্বর প্লেট ইত্যাদি পরিবর্তন করে ফেলে। পাশাপাশি তারা উক্ত মোটরসাইকেলের কিছু পার্টস পরিবর্তন বা সংযোজন করে দেয় যাতে করে প্রকৃত মালিক গাড়ীটিকে সহজে চিনতে না পারে।
মোটরসাইকেলের যন্ত্রপাতি পরিবর্তনের কার্যক্রম চলমান থাকার পাশাপাশি উক্ত চক্রের আরেকটি দল বিআরটিএ তে দালালদের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন পরিবর্তনের কার্যক্রম চালায়। এক্ষেত্রে ধৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে বিআরটিএ’র সুজন নামক একজন দালালের নাম উঠে আসে যে উক্ত চোরচক্রটির একজন অন্যতম মূলহোতা। তার মাধ্যমেই মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর পরিবর্তন করতঃ ভ‚য়া ট্যাক্স টোকেন, রোড পারমিট, ফিটনেস সনদ, ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি যাবতীয় কাগজপত্র তৈরি করা হয়ে থাকে। এরপর মোটরসাইকেলটি উক্ত চক্রের আরেকটি দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। উক্ত চক্রের অন্যতম দুই সহযোগী আল আমিন এবং মিরাজের নেতৃত্বে সেই দলটি চোরাই মোটরসাইকেলের প্রকৃত মালিক সেজে বিভিন্ন প্রতারণামূলক পন্থা অবলম্বন করে সাধারণ মানুষের নিকট তা বিক্রয় করে থাকে। এভাবেই এই বৃহৎ সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোরচক্রটি পরষ্পরের যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেল ও গাড়ী চুরি করে সেগুলো সাধারণ মানুষের নিকট বিক্রয় করে আসছে।
জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত মাহামুদ আরও জানায়, সে অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফার আশায় বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের পথ বেছে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের শুরুর দিক থেকে সে মোটরসাইকেল চোরচক্রের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে এবং এধরনের আরও কয়েকটি সংঘবদ্ধ চোরচক্রের সাথে সম্মিলিত হয়ে একটি বৃহৎ সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এভাবেই এই বৃহৎ সিন্ডিকেটটি রাজধানীসহ সারাদেশে তাদের নাশকতামূলক চুরির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ধৃত অপরাপর আসামি আল-আমিন তার দৃশ্যমান পেশা রং-মিস্ত্রীর কাজের আড়ালে তাদের চোরাইকৃত মোটরসাইকেলসমূহ বিক্রয়ের জন্য গ্রাহক সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়াও ধৃত মিরাজ তার দৃশ্যমান পেশা গাড়ী চালনার আড়ালে এসব চোরাইকৃত মোটরসাইকেলসমূহ বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে একস্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তরের কাজ করে থাকে।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।